এটি একটি ভয়াবহ মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে তার সহধর্মী বা সহধর্মিণী  (স্বামী/ স্ত্রী) তার প্রতি বিশ্বস্ত নয়। সে লুকিয়ে অন্য ব্যক্তির সাথে গোপন সম্পর্ক রাখছে।  শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখছে । এই রোগ সাধারনত পুরুষদের বেশী হয়, মহিলাদেরও হয় তবে আনুপাতিক হারে কম।  


এই ধরনের রোগে সন্দেহের কোন প্রমাণ পাওয়া না গেলেও রোগীর মনে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে সে সঠিক।  রোগী যেন এক অলীক বিশ্বাস কে আঁকড়ে পরে থাকে। রোগীর সন্দেহ যথার্থ কিনা তা জানতে তার মা বাবা, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীকে জিজ্ঞাসা করা হলেও কিন্তু তারা বলে থাকেন সেই সন্দেহের কোন ভিত্তি নেই। তবু তারা কিন্তু এই সন্দেহের  ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মানুষ গুলোকে আশ্বস্ত করার পরেও তাদের অবিশ্বাস কাটে না। 


স্বামীরা স্ত্রীদের উপর নজরদারি করা আরম্ভ করে। কখনো কখনো কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে স্ত্রী-র পিছনে লাগায়। এমন কি স্ত্রীর ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস, মোবাইল, হ্যান্ড ব্যাগ, পোশাক- পরিচ্ছদ, বেড কভার সবকিছুতেই অনুসন্ধান চালায়। হয়তো রোগী কিছুই খুঁজে পায় নি তবু তার ভিতরে অবিশ্বাস রয়েই যায়।  এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত রোগী স্ত্রীকে মানসিক এমনকি শারীরিক নির্যাতন ও করে থাকে। কখনো কখনো তো হত্যার ও হুমকি দিয়ে বসে। এই ধরনের রোগীদের শনাক্ত করার জন্য অবশ্যই তৃতীয় পক্ষের কাছে থেকে রোগের উপসর্গ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবশত সন্দেহ বাস্তবে পরিণত হয়। তখন কিন্তু তাকে আমরা ওথেলো সিন্ড্রোম বলতে পারবো না।  


তবে যেসব কারনে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে তার মধ্যে রয়েছেঃ-


▣ ওথেলো সিন্ড্রোম


▣ নেশা জাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহার ( বিশেষত গাঁজা, মদ ইত্যাদি)


▣ সিজোফ্রেনিয়া


▣ বাইপোলার মুড সিন্ড্রোম


▣ পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার


▣ শারীরিক অক্ষমতা (যা স্ট্রোক এর কারণে হতে পারে)


মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পুরুষ হলে অনেক সময় যৌন দূর্বলতার শিকার হন। রোগী অসচেতনভাবে এই দূর্বলতার জন্যেও স্ত্রীকে দায়ী করে বসেন।


🔲 ‘ওথেলো’- নামটির উৎপত্তিঃ 


সেক্সপিয়ারের এক অমর সৃষ্টি নাটকের নাম ‘ওথেলো’ যেখানকার এক কেন্দ্রীয় চরিত্র তার  সুন্দরী স্ত্রীকে অমূলক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।


▷ চিকিৎসাঃ


▣ ফিজিক্যাল


▣ সাইকোলজিক্যাল


▣ সোশ্যাল


▷ ফিজিক্যালঃ-


▣ এন্টিসাইকোটিক ড্রাগস


▣ এন্টিপার্কিনসোনিয়ান ড্রাগ - procyclidine


▣ Benzodiazepine ( ৩ সপ্তাহের বেশী নয়)


এন্টিসাইকোটিক ড্রাগস ব্রেইনের ডোপামিন, নিউরোট্রান্সমিটার কমিয়ে রোগীর অমূলক বিশ্বাস ( ডিলিউশন)  দূর করবে।


▷ সাইকোলজিক্যালঃ


রোগী স্ট্যাবল হওয়ার পর রোগী যখন তার রোগ বুঝার  ক্ষমতা লাভ করে তখন তাকে দেওয়া হয় CBT বা কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি  (চিন্তার বিচ্ছিন্নতা শনাক্ত করে দূর করার প্রচেষ্টা)


▣ Supportive সাইকোথেরাপি


▣ Feminist থেরাপি 


▣ Couple থেরাপি


▷ স্বামী বা স্ত্রীকে বলতে হবেঃ-


▣ রোগীর সাথে তর্কে না জড়াতে


▣ অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করতে


▣ রাগারাগি না করতে


রোগীকে পরীক্ষা করে যদি মনে হয় সন্দেহবশত রোগী তার স্ত্রীকে আক্রমন বা হত্যা করার চেষ্টা করতে পারে, সেক্ষেত্রে তাকে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আইন শৃঙ্খলাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা রক্ষীকেও নিরাপত্তার স্বার্থে অবহিত করে রাখতে হবে।


কিছুদিনের জন্য স্বামী ও স্ত্রীকে আলাদা রাখাই নিরাপদ হবে।


▷ সোশ্যালঃ


▣ রোগীকে তার ক্ষমতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী কোন কাজে নিয়োগ দিতে হবে।


▣ নেশা জাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহার যদি রোগের কারন হয় তবে তা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।


▣ ডিভোর্স এর কারনে অনেক সময়  রোগী তার অলীক ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে আসে, পরে পুনরায় কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তা আবার ফিরে আসে।


▣ স্ত্রী বা মেয়ে বন্ধু  যদি অভিমান/রাগবশত রোগীর অমূলক বিশ্বাস কে একবার সমর্থন করে বসে তবে রোগীর মিথ্যা বিশ্বাস বদ্ধমূল ধারনায় পরিণত হয় । এটি করা কখনোই ঠিক হবে না।


❏ আমাদের এই মানসিক রোগের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যেন রোগীরা অন্তত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পায়।


Post a Comment

Previous Post Next Post